Patra & Pan Crop Production
..........................কৃষকের সাথে কৃষকের পাশে

VERMI COMPOST কেঁচো সার


আমরা প্রত্যেকেই জানি কেঁচোকে চাষীর বন্ধু বলা হয়, এর থেকেই কৃষিকাজে কেঁচোর ভূমিকা অনুমান করা যায়. কেঁচো সারকে এককথায় বলা যায় " জৈব আবর্জনাকে এক বিশেষ প্রজাতির কেঁচোকে খাইয়ে যে সার উৎপন্ন করাহয় তাকে কেঁচো সার বলা হয়".

সাধারণত ভারতবর্ষে ৪০২ টি প্রজাতির কেঁচো দেখা যায়, তার মধ্যে মাটির উপরিভাগে বসবাসকারী কেঁচোগুলিকে সার তৈরির কাজে ব্যাবহার করা হয়.যে বিশেষ ৪ প্রজাতির কেঁচোকে সার তৈরির কাজে লাগানো হয় সেগুলি হলো 


       ** Eisenia fetida
     ** Eisenia andrei
     ** Eudrilus eugeniae
     ** Perionyx excavatus 


earth worm
এই চারটি প্রজাতি ভারতবর্ষের আবহাওয়াতে খুব ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছে.এই প্রজাতির কেঁচো গুলোর খাদ্য গ্রহণ ক্ষমতা অনেক বেশি, দেহের সমপরিমান বা তার বেশি. পাচিত খাদ্যের ৫ - ১০ শতাংশ কেঁচো নিজে গ্রহণ করে আর বাকিটা মল হিসাবে ত্যাগ করে. মল শরীরের বাইরে আসার সময় দেহ নিঃসৃত মিউকাস ও রেচন পদার্থ ইউরিয়ার সঙ্গে মেশে. আর এইটাই হলো কেঁচো সার বা ভার্মিকম্পোস্ট.

ভার্মিকম্পোস্ট এ N P K ছাড়া ক্যালসিয়াম,মেগনেসিয়াম, আয়রন,কপার, জিংক,সালফার ও সোডিয়াম বর্তমান

কেঁচো সার যেখানে তৈরি করা হয় সেই জায়গাকে ভার্মিবেড বলা হয়. নজর রাখতে হবে ভার্মিবেডে যেন সরাসরি সূর্যালোক বা বৃষ্টির জল ঢুকতে না পারে. এছাড়া কেঁচোর স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্ৰী সেলসিয়াস আদ্রতা ও P H ৬.৫ থেকে ৭.৫, পিঁপড়ে,উইপোকা বা ইঁদুরের যেন উৎপাত না থাকে সেই দিকে নজর রাখতে হবে.সাধারণত 

মাটিতে গর্ত করে পলিথিন বিছিয়ে বা মাটির উপর সিমেন্টের চোবাচ্চা করে ভার্মিবেড তৈরি করা হয়.ভার্মিবেডের আকার দৈর্ঘ্যে ইচ্ছা মতো হলেও, চওড়া ৯০-১০০ সে:মি এবং গভীরতায় ২০ - ৬০ সে:মি এর বেশি করা উচিৎ নয়. এতে বায়ু চলাচল ভাল হয় যাতে আবর্জনা স্তুপের তাপমাত্রা বজায় থাকে ও কেঁচোর কার্য্যগুন বৃদ্ধি পায়. অতিরিক্ত জল নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন বা গর্ত রাখা উচিৎ. ভার্মিবেডের একবারে নিচে পচা জৈব আবর্জনা দেওয়া উচিৎ.সেখানে ইট, বালি, নুড়ি দেওয়া উচিৎ নয় কারণ এইসব কেঁচো খায়না ফলে সারের সাথে মিশে যায়. কৃষিজাত আবর্জনা,বাড়ির আবর্জনা, গরু শুকর প্রভিতির বিষ্ঠা রেস্তোরাঁর আবর্জনা, সবজি বাজারের আবর্জনা, বাগানের আগাছা,প্রভিতি ব্যাবহার করা যায়. তবে টকজাতীয়,মাছ, মাংস জাতীয় বা কাঠের গুঁড়ো,লঙ্কা গুঁড়ো,প্লাস্টিক ইত্যাদি আবর্জনার সাথে না মেশানোই ভালো. এগুলি থেকে অ্যামোনিয়াম গ্যাস ও অজৈব লবন আসে যা কেঁচোর স্বাস্থের জন্য খুবই ক্ষতিকারক. ভার্মিবেডে আবর্জনা দেওয়ার আগে ১ - ৩ সে:মি এর টুকরো করে কেটে নিতে হবে.


বেডে আবর্জনা দেওয়ার আগে আবর্জনা অর্ধপচা করেনেওয়া উচিৎ বা বেডে আবর্জনা দেওয়ার পর অর্ধপচা হলে কেঁচো ছাড়া উচিৎ কারণ কেঁচো কাঁচা আবর্জনা খায় না ও আবর্জনা পচনের প্রথমিক দিকে যে পরিমান তাপ উৎপন্ন হয় তাতে কেঁচো মারা যেতে পারে.অর্ধপচা আবর্জনার সাথে গোবর মেশালে তা খুব সহজেই কেঁচো সারে পরিণত হয়. সাধারণত আবর্জনার উপর নির্ভর করে অর্ধপচা হতে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ সময় লাগে.প্রথমে পচা আবর্জনা ৬ ইঞ্চি থেকে ২ ফুট পর্যন্ত ভরে নিয়ে তার পর থেকে প্রতি বর্গফুট জায়গার জন্য ২৫ থেকে ৩০ টি কেঁচো ছাড়া হয় বা ৩০ কেজি আবর্জনার জন্য ১ কেজি কেঁচো লাগবে.তারপর ভেজা চটের বস্তা দিয়ে ভার্মি বেড ঢাকা দেওয়া হয়.আদ্রতা বজায় রাখতে প্রয়োজনমতো জলের ছেটা দেওয়া হয়. 

আবর্জনার রং কালো হতে শুরু করলে জল ছেটানো বন্ধ করতে হবে.বায়ু চলাচল ঠিক রাখতে আবর্জনা মাঝে মাঝে ওলোট পালট করে দেওয়া উচিৎ.কেঁচো খাওয়ার ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে সার তৈরী হয়ে যায়. কেঁচোর সংখ্যা ও আবর্জনার উপর সারের গুণগত মান নির্ভর করে.ভার্মিকম্পোস্ট দেখতে অনেকটা চায়ের গুঁড়োর মতো.সার তৈরি হয়ে গেলে কেঁচো নিচে চলে যায় বা বেডের উপর লাইট জেলে দিলে তারা নিচে চলে যায়. 


ক্রমাগত সার তৈরি করে জন্য আরেক সহজ পদ্ধতি রয়েছে. দুইটি ভার্মিবেড পাশাপাশি রেখে প্রথম বেডে টুকরো করা আবর্জনা পার্থমিক পচনের জন্য জন্য রাখা হয়,৩০ দিন পর কেঁচো ছাড়া হয় এবং দ্বিতীয় বেডে পার্থমিক পচনের জন্য আবর্জনা ভরে দেওয়া হয়,দুই বেডের মধ্যে কেঁচোর যাতায়াতের রাস্তা রাখা হয়,ফলে প্রথম বেডে সার তৈরি হয়ে গেলে খাবারের খোঁজে তারা দ্বিতীয় বেডে চলে যায়, প্রথম বেডে সার তৈরি হয়ে গেলে তা তুলে নিয়ে আবার আবর্জনা সার ভরেদেওয়া হয় ফলে সার তৈরির কাজ অব্যাহত থাকে.

No comments